বিয়ে
.
.
টিভিতে জার্মানি ফ্রান্সের মধ্যে একটা দারুন খেলা দেখছি, এমন সময় মা এসে বললো
- বাড়ীর এতো কাজ আমার আর একা একা করা যাচ্ছে না। বাড়িতে আর একজন কেউ থাকলে খুব ভালো হত, কাজের দিক দিয়ে খুব সহযোগিতা পেতাম। আমারও বয়স হয়ে গেল। (মা)
আমিও কোয়েকদিন ধরে বিয়ে নিয়ে খুব স্বপ্ন দেখছি। মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনছি।
আমি ভাবলাম এই তো সুযোগ। এই সুযোগে আমার বিয়ের কথাটা বলেই ফেলি। আমার তো অনেক বয়স হলো। এখন বিয়ে করার সময় হইছে। কিন্তু আব্বা - মা কথাটা কানে তুলে না। আমিও লজ্জায় বেশিকিছু বলতে পারি না,,
- বললাম বাড়িতে একজনকে আনলেই তো পারো। তোমাকে কাজের ব্যাপারে সাহায্য করবে। এতো কাজ কি একা করা যায় নাকি। (আমি)
- আমিও সেটাই ভাবছি যদি কাউকে বাড়িতে আনা যায় নাকি। দেখি তোর আব্বুর সাথে কথা বলে। (মা হেসে বলল)
মায়ের কথা শুনে মনটা আনন্দে ভরে গেল। আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম এই ভেবে তাহলে আমার বিয়ে দিচ্ছে।
রাতের বেলা আব্বা মা গল্প করছে। আমি পাশের রুমে শুয়ে শুয়ে ওদের কথা গুলো শোনা যাচ্ছে।কারন আমাদের বাড়িতে গ্রামের মধ্যে তাই রাত্রে একেবারে নিস্তব্ধ থাকে। আমি একটু মোবাইল দেখছিলাম শুয়ে শুয়ে। যখন মোবাইল ত বন্ধ করে শুতে এলাম তখন আব্বা মা অলরেডি গল্প শুরু করে দিয়েছে।আমার মনে হল একটু লেট করে ফেলেছি মনে হয়। মাঝখান থেকে কথা গুলো শোনা শুরু করেছি।
- কাল তাহলে দেখতে যাচ্ছো ওদের ওখানে। (মা)
- হ্যা,, তুমিও গেলে ভাল হতো। নিজের চোখে দেখে নিতে। (আব্বা)
- নাহ,, তুমি দেখলেই হবে। দেখো যেনো পর্দাশীল হয়।
- আচ্ছা।
- আচার ব্যবহার ভাল করে লক্ষ্য করবে। দরকার পড়লে আশেপাশের মানুষজনকে জিজ্ঞাসা করবে কেমন মেয়ে।
- গ্রামের মেয়ে তো ভালই হবে মনে হচ্ছে।
- আমারও তাই মনে হয়। তারপরও আমাদের পরিবারে থাকবে,, মানানসই তো হতে হবে।
এইটুকু শুনেই আমি আমার রুমে নাচতে শুরু করলাম। লুঙিটা পড়ে লুঙি ড্যান্স দিচ্ছি। বিয়ে করবো,, কত্ত মজা।
পরেরদিন রাতে আবার আব্বা মায়ের কথা শুনছি
- কি গো মেয়ে কেমন দেখলে? ??(মা )
- অনেক ভাল। দেখতে শুনতে অনেক ভাল। আমার তো বেশ পছন্দ হয়েছে। (আব্বা)
- তাহলে কি একেই ফাইনাল নাকি আরও দু এক জায়গায় দেখবে।
- আমার কাছে তো একেই অনেক ভাল লাগছে। তুমি দেখলে তোমারও পছন্দ হবে।
- তাহলে ওর পরিবারের সাথে পাকা কথা বলে ফেলো। এসব কাজে দেরি করতে নেই।
- হ্যা আমিও তাই ভাবছি। ভাল মেয়ে হাতছাড়া করা যাবেনা ।
কালকের মতো আজও ঘরে লুঙি ড্যান্স দিলাম। মনের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।
পরেরদিন আমি ঘরে বসে গান শুনছি।
“আজকে আমার বিয়ে হবে সাজ সাজ সব”
মা রুমে আসলো
- শোন তোকে একটা মেয়ে দেখে আসতে হবে। (মা)
লজ্জায় পড়ে গেলাম। আসলে আমি আব্বা মায়ের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করতে চাইছিলাম। আমার বউ হলেই হলো। লজ্জা পেয়ে মাকে বললাম,,
- মা তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ।
মা কিছু না বলে চলে গেল। সেদিন মা ও ওই মেয়েকে দেখতে গেছিলো। মায়েরও পছন্দ হয়ে গেছে। দুই তিনদিন নাচতে নাচতে কাটিয়ে দিলাম। জীবনের প্রথম বিয়ে,, অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে। ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো ডানা বাঁধতে শুরু করেছে।
.
.
এক সপ্তাহ পর
খুব গরম পড়েছে। সেদিন আমার বাড়িতে কারেন্ট ছিল না। রুমের ভিতর ফ্লোরে আমি শুয়ে আছি। খুব গরম লাগছে তাই বিছানায় শুতে ইচ্ছা করে নি।
- ভাইজান উঠেন,, ঘর মুছবো,, ও ভাইজান উঠেন
কে একজন ডাক দিলো। আমি উঠলাম।
- এই মেয়ে তুমি কে? (আমি)
- আমি আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়ে (মেয়েটি)
- কাজের মেয়ে মানে? আপনারে কে রাখছে।
- কেন - কাকু কাকিমা দুজন মিলেই রেখেছে।
আমাকে না বলে মা কাজের লোক রাখলো। চিৎকার করে মাকে ডাকলাম
- কি হল রে ,, এভাবে চিৎকার করছিস কেন? (মা)
- তুমি কাজের লোক রাখবে আমাকে বলো নি কেন? তোমাকে বলেছি না আমার পছন্দ ছাড়া কাজের লোক রাখবে না। (আমি)
আসলে আমার সহজে কাজের লোক পছন্দ হয় না। তাই আগেই আব্বা মাকে বলছি এবার কাজের লোক রাখার সময় যেনো আমাকে বলে রাখে।
- তোকে তো বলেছিলাম। তুই তো বললি আমাদের পছন্দই তোর পছন্দ। (মা)
- কিইই,, আমি তো ভেবেছিলাম আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যেতে বলেছিলে। (আমি)
- তোর বিয়ের মেয়ে মানে? পাগল হইছিস?
- তুমি আব্বার সাথে কয়দিন ধরে আমার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছো না?
- কি আবল তাবল বকছিস। তোকে বিয়ে দিয়ে কি একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করবো নাকি? আগে কিছু কর তারপর বিয়ে নিয়ে চিন্তা করবি।
এবার বুঝতে পারলাম। আব্বা মা কাজের মেয়ের কথা বলছিলো,, আমার বিয়ের না। কাজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে হাসছে। ঝাড়ি দিয়ে তাকে বের করে দিলাম। মনের দুঃখে গান গাইতে লাগলাম,,
“বাবা আমি কি আর বিয়ে করবো না
বাবা আমি কি আর বিয়ে করবো না"