শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০

প্রকৃত ভালোবাসার সংসার


গত ১০ বছরে কোন দিন আমাকে রোহিতের কাছ থেকে শুনতে হয়নি, তানিয়া, এই পোশাক পরবে না। সালোয়ার কামিজ, শাড়ি, ফতুয়া, টিশার্ট,নাইটি, বিকিনি, যাই পরি না কেন, সিদ্ধান্ত শুধুই আমার। রোহিত সবসময় প্রশংসা করে, মাঝে মাঝে খুনসুটি করে, মাঝে মাঝে খোঁচা খুঁচি করে, সব সময় আমার পিছনে লেগে মজা করে।  কিন্তু সমাজ, ধর্ম, বন্ধু আত্মীয় ফ্যামিলি, কার দোহাই দিয়ে, আমাকে মেয়ে-মানুষ বানাবার চেষ্টা করেনি।

 

১১০ স্পীডে গাড়ী চালাতে গিয়ে কখনো রোহিত আমাকে বলে নি, তানিয়া স্পীড কমাও, বরং আমার উপরে বিশ্বাস রয়েছে ওর। সিটে হেলান দিয়ে ভাঙা  গলায় গেয়েছে , 'চিরদিনই তুমি যে আমার , যুগে যুগে আমি তোমারি।

 

আমি একটা অফিসে কাজ করি। যখন বলেছি কাজ থেকে ছুটি নেব, সঙ্গে সঙ্গে বলেছে, নাও ,আমি লিখতে ভালোবাসি  কিন্তু লিখতে না বসলে, অনেক দিন লিখছ না, লেখার জন্য সময় দাও। তখনই আমার পাশে এসে থেকে বলেছে চিন্তা করোনা, আমি আছি তোমার পাশে, যখন ভালো বাসতে চেয়েছি তখনই ভালোবাসায় ভরিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে, কোনোদিন ভালোবাসার অভাব বুঝতে দেয়নি। কখনো কোনো বিপদ এলে আমরা বিপদ এক সাথে সামলাই, ভুল এক সাথে শোধরাই, আর রোজ এক সাথে একটু একটু করে বুড়ো হই, আর নিজেদের নিয়ে মজা করি।

 

কথাগুলো কেন বললাম আপনাদের এবার বলি, আমাকে এক আপু দিদিভাই গর্ব করে বলছিলেন, আমি খুব সুখী, আমার স্বামী আমাকে খুবই সাপোর্ট করে, সে কখনো আমাকে বকাবকি দেননি। আমি খুব অবাক হয়ে জিগ্যেস করলাম , জামাই বকাবকি কেন দেবে !! জামাই কি আপনার মালিক নাকি ? বকাবকি না দেবার মধ্যে গর্ব করার মত বিষয় কোথা থেকে পেলেন !

 

আপনি রোজ ভাত-রুটি  খান, এখন যদি বলেন ভাত-রুটি খাওয়াটা খুব গর্বের বিষয় তাইলে বরং অস্বাভাবিক লাগবে।

 

প্রসঙ্গত বলে রাখি, উনি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা চাকরী করেন, ৩টি ছেলে-মেয়েদের লালন পালন করেন , সংসার এর যাবতীয় কাজ করেন, আত্মীয় বন্ধু প্রতিবেশীদের প্রতি সকল সামাজিকতা পালন করে তারপর স্বামীর ধমক না খাওয়ার তথাকথিত যোগ্য হয়েছেন।   এক সময় উনি বাংলা চ্যানেলের ঘোষিকা হতে চেয়েছিলেন, উনার মধ্যে ঘোষিকা হওয়ার একটি সুপ্ত ইচ্ছে ছিল কিন্তু সেটা হয়ে উঠেনি। এক সময় ভাল গান গাইতেন, ওনার মতে সংসার করলে অনেক ছার দিতে হয় তিনি সেই ছার দিয়ে স্বামীর ধমক না খাবার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

 

ওনার সাথে আলাপের পর আমার মনে হল উনি স্বামী-স্ত্রীর রসায়ন, প্রেম , সম্মান , সাপোর্ট এর সংজ্ঞা জানেনই না। ওনাকে আমি দোষ দেই না, উনি এই সমাজ থেকে শিখেছেন, যে স্বামী গায়ে হাত দেয় না, সে ভাল স্বামী। যে স্বামী তার বেতনের টাকা স্ত্রী কে দিয়ে বাজার করার দায়িত্ব স্ত্রীর ঘাড়ে চাপান, সে স্বামী ভাল স্বামী, যে স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ির সবার দায়িত্ব পালন করেন, সে তার স্বামীর প্রিয় হন। আর স্বামীর প্রেম মানে হল, স্বামী তার বন্ধুদের সঙ্গে  আড্ডায় হাসিমুখে বলেন , ওর মত ভাল রান্না আর কেউ করতে পারে না,  ওর মত দায়িত্ববান স্ত্রী আর কাছে আছে বলে মনে হয়না !!

 

আপনারা যারা ভাবেন প্রেম মানে জামাই এর যাবতীয় ইচ্ছা কে নিজের ভেবে তাকে খুশি রাখার বিনিময়ে জামাই আপনাকে বকবেন না ,মারবেন না, তারা ভুল জানেন।

 

যে স্বামী তার স্ত্রীর স্বপ্নগুলো পূরণে পাশে থাকে সে স্বামী তার স্ত্রী কে ভালোবাসে। যে স্বামী স্পষ্ট করে বলে, তুমি কোন খাদ্য বস্তু না তাই তোমার পোশাক তোমার ইচ্ছে। তুমি একজন মেধাবী মেয়ে তাই তোমার মেধা কাজে লাগাও, আমি আছি তোমার পাশে, তিনি একজন ভাল সঙ্গী।

 

সংসার করার দশ বছর পরে যে স্ত্রী বলতে পারে, ওর জন্য আমার লেখক হওয়া হয়েছে, ওর জন্য আমার গায়িকা , সংবাদ পাঠিকা অথবা ডানায় রঙ লেগেছে, সে স্বামী সত্যিকার অর্থেই প্রেমিক, সেই সংসার একজোড়া প্রেমিক প্রেমিকার সংসার। সুখের আর সম্মানের সংসার। সত্যিকারের সংসার

 

 

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার সন্তানের বুদ্ধির বিকাশ কিভাবে ঘটাবেন ??

  https://amzn.to/3KHLreQ একজন অভিভাবক হিসেবে সন্তানের উৎকর্ষতার দিকে আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হয়। আমরা সকলেই আমাদের সন্তানের মেধার বিকাশের ...