মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০

ভালোবাসার কঠিন পরিস্থিতি

ভালোবাসার গল্প...(কাঁদবিনা প্লিজ).......... 

 সুরজ প্রথম যে দিন তানিয়া কে স্কুলের শিউলি গাছের তলায় বন্ধুদের এবং বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে দেখেছিল সেই প্রথম দেখাতেই ওর তানিয়াকে ভীষণ ভালো লাগলো। কিন্তু ও কিছুতেই তানিয়াকে কিছু বলতে পারতো না। কারন সুরজ দেখতে খুব একটা হ্যান্ডসাম ছিল না ।

 আর সুরজের গায়ের রঙ কিছুটা কালচে।

 সেইদিক থেকে তানিয়া ছিল খুব সুন্দরী। যে কোন ছেলে ওকে খুব সহজেই প্রপোজ করতে পারতো। সুরজ ভাবত তানিয়াকে বলতে গিয়ে যদি তানিয়া ডাইরেক্ট না বলে দেই সেই নিয়ে ও খুব চাপে থাকত। ও কিছুটা ইমোশনাল প্রকৃতির ছেলে ছিলো।

সব কথা খুব সহজেই ও বলতে পারতো না। এইভাবে বেশ কিছুদিন কাটলো। বন্ধুদের মাঝে মাঝে তানিয়াকে নিয়ে বলতো। 

একদিন তানিয়ার কাছে এই খবরটি গেলো যে সুরজ বলে যে ক্লাসমেট টি আছে সে ওকে পছন্দ করে কিন্তু বলতে পারছে না । একদিন তানিয়া সুরজকে ডাকলো এবং সেই থেকে ওদের বন্ধুত্বটা শুরু হল।

কখন যে ওদের বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিবর্তন হয়ে গেছে বুঝতেই পারলো না। দুজনেই দুজনকে ভীষণভাবে চাইতে লাগল। এইভাবে চলতে চলতে ওরা স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে কলেজ এ চলে এলো। 

কলেজে পড়া চলাকালীন ওরা আরও অনেক বেশি সময় নিজেদের দিতে পারলো এবং একে অপরকে আরো ভালো করে বুঝতে পারল। কলেজ এর পড়া শেষ করে সুরজ একটা কাজে ঢুকে গেল এবং তানিয়া আরো উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়তে গেল। তানিয়া কিছুতেই সুরজ কে ছাড়া থাকতে পারলো না । 

তানিয়ার পড়াশোনা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই দুজনের পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল। কয়েকবছর ওরা খুব ভালো ভাবেই সুখে সংসার যাপন করতে লাগলো। 

তানিয়া মাঝে মাঝেই ওর স্কুলের বন্ধুদের সাথে গল্পকরতে লাগলো। 

এটা সুরজের খুব একটা ভালো লাগতো না। সুরজ : তোমাকে অনেকবার না বলেছি, অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলতে না..! 

তানিয়া : ওরা আমার বন্ধু ৬-৭ বছর আমরা এক সাথে পড়েছি স্কুলে এবং কলেজে, কথা না বললে কি করে হয় ..?? 

সুরজ : তুমি যখন আমায় নিষেধ করলে তারপর আমি তো কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা...!! তুমি তোমার আরও অনেক মেয়ে বন্ধু আছে । মেয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলো আমার কোনো সমস্যা নেই....। কিন্তু তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে কোন কথা বলবে না, এটা আমার ভালো লাগে না , এটা আমি সহ্য করতে পারি না।

 তানিয়া : দেখো সুরজ তোমার পছন্দ অপছন্দে আমার কিছু যায় আসে না....। তুমি ছাড়াও আমার পার্সোনাল লাইফ আছে যা আমি অন্যদের বাদ দিয়ে এড়িয়ে চলতে পারবো না। 

 সুরজ: কি....!!!...???? আমি ছাড়া তোমার অন্য পার্সোনাল লাইফ..!!! এটা থাকা তো ঠিক নয় !!! 

আমি তোমার স্বামী, সেই অধিকার হিসেবে আমার কি তোমাকে কিছু বলার, নিষেধ করার অধিকার নেই....??? 

 তানিয়া : বেশী অধিকার ফেলাতে এসো না !! আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। 

 সুরজ : সরি, তোমাকে নিষেধ করা আমার ভুল হইছে, ক্ষমা চাই, ক্ষমা করে দিও আমায়। আমি এরপর থেকে তোমাকে আর ডিস্টার্ব করবো না । তানিয়ার কথা শুনে সুরজ খুব কষ্ট পেলো। সুরজ কল্পনাও করেনি এমন কথা বলবে বা বলতে পারে তানিয়া। নিজের অজান্তেই কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে দু'চোয়াল শিক্ত হলো..। 

তানিয়াকে সুরজ অনেক বেশী ভালবাসে। সেইজন্য তানিয়ার কথা মেনে নিতে পারলো না। 

তানিয়া : কি ব্যপার না ঘুমিয়ে অমন করে কি দেখছো......??? ঘুমাবে না ??? 

সুরজ : আচ্ছা তানিয়া..!! ধরে নাও আমি নেই... আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে তুমি....??? 

তানিয়া : কেন কোথায় যাবে তুমি.....?? 

সুরজ : এমনি ধরে নাও মানুষ এই আছে এই নাই, কখন কি হয় বলা তো যায় না...!! আমায় ছাড়া একা থাকতে পারবে.....???  
তানিয়া : এসব কি বলছো.....?? ঘুমাও তো...... ঘুমিয়ে পড়। অনেক রাত্রি হল । 

সুরজ : আমার কথা কি মনে পড়বে....??? 

তানিয়া : না একটুও মনে পড়বে না। 

সুরজ : আমি তোমার যোগ্য নই তাই না...?? 

তানিয়া : আমার এসব কথা একটুও ভালো লাগছে না...... ঘুমাও তো, আর একটা কথাও বলবে না। তানিয়া ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল বেলা চোখ খুলতেই তানিয়া দেখতে পেলো সুরজ ওর দিকে চেয়ে আছে, সুরজ এর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে সুরজ রাতে ঘুমায় নি। 

তানিয়া : কি ব্যপার সারারাত ঘুমাও নি...??? 

সুরজ: হুম, ঘুমাইছি তো... একটু আগেই উঠলাম। ঘুম টা ভেঙে গেল। 

সুরজ : তুমি তো আমার আগে উঠো না আজ কেন..???

সুরজ : না এমনিতেই...... সুরজ কখনোই তানিয়ার সাথে মিথ্যা বলেনা সেটা যে বিষয়ই হোক না কেন। কিন্তু তানিয়া স্পষ্ট বুঝতে পারলো সুরজ মিথ্যে বলছে.... সুরজ সারারাত ঘুমায়নি। তানিয়া বুঝতে পারলো না সুরজের কি হয়েছে।

 সুরজ প্রতিদিন কাজে বের হবার সময় তানিয়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে বের হয়। আজ দুইবার চুমু খেলো, অন্য দিন হাসিখুশি যায়, আজ চুপচাপ, নিস্তব্ধ, চোখে জল ছলছল করছে। সেরকম কিছু বলল না। 
সুরজ : যাই বাবু.... (কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলো) তানিয়া : কি হলো কিছু ফেলে গেছো.....??? 
 
সুরজ : না.... তানিয়া : তবে....... সুরজ কিছু না বলে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরলো কপালে আবার চুমু খেলো আর বললো ভালো হয়ে থেকো বাবু। নিজেকে কনট্রোল করতে পারছে না সুরজ ...।

 আর কিছু না বলে সুরজ চলে আসলো, তানিয়ার চোখে জল.... তানিয়া ভাবছে সুরজ এর কি হলো.....??? ও তো এমন না.....!! এমন করে না । 

 সুরজ কে খুব ভাল করেই চিনে তানিয়া, অনেক বছর প্রেম করে বিয়ে হয়েছে ওদের। সুরজ তানিয়ার চেয়ে পড়াশোনা কম করছে আবার চেহারার দিক দিয়েও তানিয়া ওয়াও আর সুরজ একটু কালো। 

কিন্তু তানিয়া জানে সুরজ ওকে নিজের চেয়েও বেশী ভালবাসে। সুরজ তানিয়াকে অনেক বার বলেছে আমি কি তোমার যোগ্য...? 

 উত্তরে তানিয়া বলেছে : দেখো সুরজ....!! ভালবাসা যোগ্যতা বা চেহারা দিয়ে হয় না, তুমি আর এসব কথা বলবে না। তানিয়া সুরজ এর অনেক কথাই মানতে চাইতো না যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করতো।

 সুরজ কিছু বলতো না, কোন বিষয় জোর করতো না, হার মেনে নিতো...। 

সুরজ চলে যাবার পর তানিয়া বিছানা ঠিক করতে গেল রুম এর মধ্যে ।

বিছানা ঠিক করতে যেয়ে তানিয়া একটা চিরকুট পেলো....। 

সুরজের লিখা....... 

বাবু তোমাকে ছাড়া থাকা কষ্টের। তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখা বা কথা বলা আরো অনেক অনেক বেশী কষ্টের যা আমি সহ্য করে নিতে পারছি না। আমি চেষ্টা করেছি তোমাকে ফিরাতে কিন্তু আমি ব্যর্থ। হয়তো এখন আমার কোন মূল্য নেই তোমার কাছে......

যেখানে আমি তোমার স্বামী হয়ে কোন মূল্য পেলাম না তাই চলে যাচ্ছি অনেক দূরে ............

 আজ থেকে তুমি স্বাধীন, মুক্ত করে দিলাম তোমায়। বাবু ' আমার কথা মনে পড়লে আকাশের তারাঁর দিকে তাকাবে...... 

সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরা টাই আমি, দূর থেকে তোমায় দেখবো, কথা বলবো আমার বাবুটার সাথে। লক্ষী হয়ে থেকো, ভালো থেকো" 

সাথে সাথে সুরজের মোবাইলে কল দিলো তানিয়া কিন্তু মোবাইল বন্ধ পেলো। কি করবে বুঝতে পারছে না তানিয়া। সুরজ অন্য ছেলেদের তুলনায় খুব বেশী ইমোশনাল। 

তানিয়া ফ্যামিলির অন্য সবার কাছে কল দিলো। সবাই সুরজকে কল দিতে লাগল। সবাই সুরজের নাম্বার বন্ধ পাচ্ছে....!! 

 তানিয়া অঝোর ধারায় কাঁদছে এদিকে সবাই সুজয়কে খুঁজতে খুঁজতে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে কোথাও সুজয়কে পাওয়া যাচ্ছে না। 

প্রায় ৪-৫ ঘন্টা পর খবর এলো সুজয়ের লাশ হাসপাতালে......!!! রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে সুজয়। তানিয়া পাথর হয়ে গেল, তানিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, তানিয়া জানে এটা এক্সিডেন্ট না.....। 

সূজয় আত্যহত্যা করছে। আর এ জন্য দায়ী তানিয়া........। তানিয়া কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না, তানিয়া নিজের ভুল বুঝতে পারছে, হাউ মাউ করে কাঁদছে..., সামান্য কিছু ভুলের জন্য সে আজ তার ভালোবাসার মানুষকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললো..।

 তানিয়া হাজার চাইলেও আর সুজয়কে ফিরিয়ে আনতে পারবে না...।

 তানিয়া এখন রাত হলেই ছাদে গিয়ে বসে থাকে সুজয়ের সাথে কথা বলার জন্য। 

ছাদে গিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরাটার দিকে তাকিয়ে থাকে আর কথা বলে..... " বাবু কেমন আছো তুমি আমাকে ছেড়ে"...?? 

বাবু আমি এখন কারো সাথে কথা বলি না। বিশ্বাস করো, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও, শুধু তোমার সাথে বলি এখন আমি শুধু তোমার বাবু।

 আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি বাবু তাই না....??

 বাবু আমি বুঝতে পারি নাই আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি খুব পচা,খুব খারাপ তাই না বাবু.....?? কি বললে.?? 

আমার বাবু টা পচা না খারাপ না.....??? হুম আমি খারাপ আমার ভুলের জন্য তোমাকে আজ হারিয়ে আমি এখন একা। 

এভাবেই প্রতিদিন তানিয়া কথা বলে সূজয়ের সাথে নিজ থেকে নিজে। তানিয়াকে ডাক্তারর দেখানো হয়, আস্তে আস্তে তানিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

 তানিয়া বিকাল হলেই ছাদে গিয়ে বসে থাকে সুজয়ের জন্য...কিন্তু সুজয় তো আর ফিরে আসে না.....!! সে যে চলে গেছে না ফেরার দেশে !!!! 

সুজয় তো কোনদিন ফিরবে না তানিয়ার কাছে।
Love Story: Can love only be known in short doses?
 #ধন্যবাদ#

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার সন্তানের বুদ্ধির বিকাশ কিভাবে ঘটাবেন ??

  https://amzn.to/3KHLreQ একজন অভিভাবক হিসেবে সন্তানের উৎকর্ষতার দিকে আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হয়। আমরা সকলেই আমাদের সন্তানের মেধার বিকাশের ...