আমি আমার স্ত্রী পায়েল এর আচরণ দেখে আমার সন্দেহ হয়। কিন্তু কোন প্রমাণ পাচ্ছি না ব্যাপার টা সত্যি কিনা। । তাই বাসার মধ্যে সিসি ক্যামরা লাগিয়েছি।
ব্যাপারটা শুনতে কেমন কেমন লাগছে। কিন্তু তাও আমাকে পরিবারের জন্য এইটা করতে হয়েছে ৷
পায়েলকে আমি ভালোবেসেই বিয়ে করেছি। তিন বছর প্রেম করলাম। তারপর অনেক জল প্রবাহের পরে আমাদের বিয়েটা শেষ হল। কিন্তু আমি সংসারের জন্য দিনরাত কাজ করতে করতে আর বড় ছেলেটা আর ছোটো মেয়েটা হওয়ার পর ভালোবাসা বলতে ফেসবুকে ছবি আপলোড করে ভালোবাসি বলাতেই আটকে রইলো।কাজের চাপে সেরকম পায়েলকে আর সময় দেওয়া হয়ে উঠে না।
পায়েলকে এখন আমি চিনতে পারি না। কি খিটখিটে আর ঝগড়াটে হয়েছে। কথায় কথায় খোটা দিয়ে কথা বলে। সারাক্ষন রাগ যেন নাকের উপর ৷ প্রায় দেখি সন্ধ্যা অবধি চুল ভেজা। জিজ্ঞেস করলে বলে কাজ করতে করতে অনেক দেরীতে স্নানকরা হয় । কি এমন কাজ ঘরে ?
মা বাবা আর দুইটা বাচ্চা। ভাব এমন যেন মায়েদের মতো দশ-পনেরো জনের কাজ করছে। কোন কাজ ঠিক মতো করে না। একটা জিনিস পাওয়া যায় না সময়মতো । মাঝেমধ্যে আমার পোশাকগুলো অবধি আয়রণ করা পাওয়া যায় না। রান্না কোন দিন ঝাল, তো কোন দিন লবণ নেই।
সারাদিন অনলাইন দেখা যায়৷ জিজ্ঞেস করলে বলে একবার হয়ত ঢুকি আর অফ করা হয় না। তাই আমার সন্দেহ লাগে। তাই কাল চুপি চুপি সারাঘরে ক্যামরা লাগিয়েছি৷ অফিস থেকে বসে দেখবো কি করে সারাদিন অনলাইন এ থেকে ।
আমি অফিসের কম্পিউটার টি চালু করলাম। করলাম। ফাইল গুলো নিয়ে চোখ বুলাচ্ছি।পায়েল এখন রান্নাঘরে সকালে নাস্তার পরে থালাবাসন গুলো পরিস্কার করছে। ফাইল থেকে চোখ তুলতেই দেখি পায়েল বেড়রুমে বিছানা গুছিয়ে রাখছে সব রুমের ৷ রাহুল স্কুলে গিয়েছে। দুই বছরের মেয়ে রোনিয়া তখনো ঘুমে।
রোনিয়ার জন্য রান্নাঘরে উনুনে খাবার বসিয়ে রুটি সবজি নিয়ে বসলো। আমরা তো অনেক আগে করেছি পায়েল এখন নাস্তা করছে। সাথে মোবাইল নিয়ে অনলাইন ঢুকল। আমি এইবার নড়েচড়ে বসলাম। এইবার বুঝি ধরা খেলো বাছাধন।
রুটি কিছুটা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে রোনিয়া আমার মেয়ে উঠে গেলো ৷ রোনিয়ার কাছে গিয়ে ওকে অনেকক্ষন আদর করে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে এল। টিভির সামনে বসিয়ে দিলো। একবার ওর নিজের
খাবারটা খাচ্ছে আবার রান্না ঘরে গিয়ে রোনিয়ার খাবারটা রেডি করছে।
খাবারটা খাচ্ছে আবার রান্না ঘরে গিয়ে রোনিয়ার খাবারটা রেডি করছে।
রোনিয়াকে খাওয়াতে নিলো। মেয়ে টিভি দেখছে, দৌড়াচ্ছে। কত কিছু করছে। কিন্তু তখনো অনলাইন দেখাচ্ছে পায়েলকে কিন্তু ও বাচ্চার পিছনে ছুটছে।
আমি কাজ করছি আর কম্পিউটারে চোখ বুলাচ্ছি। মেয়ের খাবার শেষ হলো এক ঘন্টায়। পায়েল আমার কালকের শার্ট প্যান্ট ছেলের ড্রেস, মেয়ের অনেকগুলো ছোট ছোট ড্রেস সব তুলছে। বাথরুম গিয়ে সব সাবান জলে ডুবিয়ে রেখে আবার রান্না ঘরে ফিরে আসে। ফ্রিজ থেকে মাছ মাংস নামিয়ে মাকে বলল তরকারী কেটে দিতে।
ভাত আর রোনিয়ার জন্য খিচুড়ি তুলে দিয়ে একটা কাপড় নিয়ে ঘরে সব ফার্নিচার পরিস্কার করছে। তখনো অনলাইন শো করছিল পায়েলকে। মোবাইলে চোখ গেলে এসে ডাটা অফ করে ৷ কাজ করছে আবার রান্না ঘরে গিয়ে রান্না দেখছে ৷ কত ব্যাস্ত দেখাচ্ছে ওকে।
উনুনে একদিকে তরকারী দিলো খুব দ্রুত আবার পেয়াজ কেটে উনুনে দিচ্ছে। আবার মাংস কাটছে।
তখন বাবা এসে বলল-
- চা দাও তো একটু কড়া করে। আর একটু নাস্তা দাও ৷
পায়েল উনুনে তরকারী নাড়ছে আবার বাবাকে খাবার দিচ্ছে।
পায়েল আবার ছুটছে রোনিয়ার পিছনে পিছনে ফল খাওয়াতে । এরপর বাথরুমে গিয়ে কাপড় সব ধুয়ে শুকাতে দিলো। পায়েল পুরো ভিজে গিয়েছে কিন্তু স্নান করে নি। এত দ্রুত কাজ করছে কেন?
পায়েল রান্না শেষ করে সব গুছিয়ে ফেলেছে। তখন মা এসে বলল -
-বেগুন ভর্তা করিও তো শুটকি দিয়ে।
পায়েল মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু কোন কিছু বলল না। হঠাৎ আমার ব্যাপারটা চোখে লাগলো। পায়েল রাগ ও দেখালো না। এইটা হয়ত প্রতিদিন চলতে চলতে পায়েলের রাগ হয়ত আগে করত কিন্তু এখন ও সব সয়ে গেছে। অসহায় লাগছে ওকে। পায়েল আবার মেয়ের খাবার নিয়ে ছুটছে। কি দুষ্টমি করছে ও।
যখন খাচ্ছে না তখন একটা থাপ্পড় দিলো, তখন মা এসে পায়েলকে উল্টা বকা দিয়ে রোনিয়াকে নিয়ে গেলো। খাবার রয়ে গেলো। পায়েল একটু চা খেতে বসলো তখন রোনিয়া আবার কান্না শুরু করতে
ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
পায়েল উনুনে বেগুন আর শুটকি দিয়ে ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে। তখন রাহুলকে
স্কুল থেকে নিয়ে এলো বাবা। রাহুল এসে শুরু করলো দুষ্টমি। পায়েল রাহুল আর রোনিয়াকে স্নান করাতে গেলো। যেন যুদ্ধ করছে। আবার এইদিকে রান্নাঘরে ভর্তার জন্য দেওয়া বেগুন প্রায় পুড়ে গেছে।
পায়েল ঘর মুছতে গেলো। রান্নাঘরে গিয়ে ভর্তা করছে আবার ঘর মুছতেছে। বাচ্চাগুলো টিভি দেখা নিয়ে মারামারি করছে। পায়েলের পরিস্কার করা ঘরে আবার ময়লা করছে। পায়েল ওদের বকাবকি করছে।
বাসায় থাকলে আমি উল্টা পায়েলকে বকা দিই ওদের কিছু বললে। অদ্ভুত ব্যাপার এখন আমার স্বাভাবিক লাগছে।পায়েলের জায়গায় আমি হলে আরো বেশি রাগ করতাম মনে হচ্ছে। পায়েল ঘর মুছে, বাথরুম গুলো পরিস্কার করছে। তখন প্রায় দুইটা বেজে গেছে।
বাবা ভাত চেয়ে যাচ্ছে। মা কিন্তু টিভি দেখছে তখন।পায়েলকে ক্লান্ত লাগছে। পায়েল এক গ্লাস পানি খেয়ে আবার রান্না ঘরে গিয়ে ভাত তরকারী সব এনে টেবিলে রাখলো। বাচ্চাদের জন্য খাবার নিচ্ছে। বাবা চিৎকার করছে,
- ভাত দিয়েছো পানি কে দিবে? গলায় ভাত লাগিয়ে মারতে চাও নাকি? আগে পানি দিবে।
পায়েল আবার দৌড়ে এসে ফিল্টার থেকে পানি নিয়ে দিলো। এইটা তো বাবাও করতে পারতো।
আমার আবার কেমন যেন লাগছে বুকে। আমি কি করি কখনো এই কাজ টা।
পায়েল রোনিয়াকে খাওয়াচ্ছে।রাহুলকে বাবা মায়ের সাথে খেতে দিলেও ও খাচ্ছে না। পায়েল রোনিয়াকে
চেপে ধরে কোন মতে কার্টুন দেখিয়ে খাওয়াচ্ছে। আবার রাহুলকে খাটের উপর থেকে ব্যালকনি থেকে ধরে এনে পিঠে একটা দিয়ে ভাত খাওয়াচ্ছে।
বাচ্চারা যখন খাচ্ছে না। পায়েল অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। কারো দিকেই না। কিন্তু পায়েল বিরক্ত ও না রাগেও না। কেমন যেন অসহায় লাগছে ওকে।
পায়েল এখনো কিছু খায় নি। তাও বাচ্চাদের পিছনে ছুটছে। তখন মা বাবা পায়েলকে আবার বকাবকি করছে।
- মাছে ঝাল বেশি হয়েছে, ভাত আরেকটু ফোটাতে পারো না শক্ত থেকে যায়, বেগুন ভর্তায় তো লবণের ছিটেফোঁটা নাই।
-সারাদিন কোন কাজ নাই। টিভি দেখো মোবাইল চালাও আর দুইটা রান্না আরকি। খাওয়া সময়ও যদি ঠিক মতো খেতে না পারি কেমন লাগে?
পায়েলকে চরম বিরক্ত দেখাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না। তখন ও বাচ্চাদের আরো জোরে জোরে থাপ্পড় দিয়ে ভাত খাওয়াচ্ছে।
সবার খাওয়া শেষে পায়েল সব থালা বাসন তুলে পরিস্কার করল। বাচ্চাদের আরো কাপড় হয়েছে সেগুলো ধুয়ে শুকাতে দিলো। ব্যালকনির চারাগুলোর যত্ন করে নিজে স্নান করতে গেলো। ওমা পায়েল দশ মিনিটে বের হয়ে গেলো। পায়েল খেতে বসলো তখন প্রায় সাড়ে তিনটা। পায়েল আবার মোবাইল হাতে নিলো।
কিছুক্ষন ফেসবুক চালিয়ে ওর মায়ের সাথে কথা বলছে। পায়েল ভাত খাচ্ছে তখন বাবা এসে রোনিয়াকে দিয়ে গেলো বাবা ঘুমাবে। রোনিয়া বিরক্ত করছে তাও খেয়ে নিলো।
পায়েল এখন ভীষণ ক্লান্ত লাগছে কিন্তু রেস্ট নিতে পারছে না। রোনিয়া ঘুমাচ্ছে না। রোনিয়া ঘুমালো ৫ টার দিকে।
রাহুল তখন কি যেন ভেঙে ফেলেছে। ওটা পরিস্কার করে আবার শুয়ে পড়ল। সাড়ে পাঁচ টায় বাবা আবার চা চাইছে। মা চিৎকার করছে,
-এতক্ষন কিসের ঘুম? ঘরের বউ এতক্ষন ঘুমালে ঘর তো লক্ষীছাড়া হবে৷
পায়েল উঠতে পারছে না। পা রাখতে পারছে না। তাও উঠে আবার ঘর ঝাড়ু দিয়ে বাবাকে চা দিলো। সবার জন্য নুডলস বানিয়ে আমার জন্য কিছুটা রেখে দিলো। রাহুলকে পড়াতে বসেছে আর বার বার বাইরের দিকে দেখছে। হয়ত আমার অপেক্ষায়।
তখন আমার বুকটা আবার থমকে দিয়ে উঠল। অফিস থেকে বের হওয়ার আগে দেখলাম শার্ট আয়রন করছে। তারপর শুয়ে আছে। কোমর ধরেছে।
বাসায় ফিরে এলাম। আজ পায়েলের সাথে চোখ মেলাতে পারছি না। কিন্তু এই পায়েল দশ বছর ধরে করে আসছে। কত দিন হিসাব করলে আমি পায়েলের সামনে দাঁড়াতেই পারব না।
পরের দিন ও সেই একই রকম রুটিন পায়েলের।কোন দিন আরো বেশি চাপ পড়ে যায়। মাঝে মাঝে রোনিয়াকে কোলে নিয়ে কাজ করে। কারো সাথে মোবাইল কথা বললে সেটায় ওর কথা। সারাদিন আর কার সাথেই বা কথা হয়ে উঠে ওর। আমিও তো দরকারি কাজ ছাড়া পাশে বসে কখন গল্প করেছি ভুলে গিয়েছি।
এইভাবে তিন চার দিন দেখার পর নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগছে। কত আদরের মেয়ে ছিলো পায়েল। দশটায় ঘুম থেলে উঠে ইউনিভার্সিটি যেতো। আমার সাথে দেখা করতে এলে কত সেজে গুজে আসতো, অনেক লম্বা চুল ছিলো, যত্ন করতো, আর এখন। আমার ঘর আমার সন্তানদের জন্য তো কোন শখ ওর নেই। আর আমি ওকে ভালোবাসতেই ভুলে গেছি।
তখন আমার কলিগ শফিক সাহেব এলো। ওনাকে বললাম,
-শফিক ভাই, আপনার মিসেস তো জব করে,ঘরের কাজ, বাচ্চা, আপনার মা-বাবা কে দেখে,?
- আমার মিসেস অনেক করে ভাই, সকালে উঠে রান্না টা করে আসে। দুইটা কাজের মেয়ে আছে। একটা বাচ্চা দেখে আর একটা সমস্ত কাজ করে। মা বাবা অসুখ বিসুখ হলে ঝামেলায় পড়ি। নার্স আনতে হয়। বাচ্চাটাকে সবে স্কুলে দিয়েছি তার জন্য ও টিচার আছে।
- বেতন কেমন তাদের?
-ওরে বাবা, সেটা বলবেন না ভাই, ছুটা বুয়ার বেতন ২৫০০ টাকা, পার্রমেন্টটা ৪০০০ টাকা। টিচার ৩৫০০ টাকা। নার্স আনলে তো প্রতিদিন ১২০০ টাকা।
আপনার তো ভাই সেসব খরচ নেই। সব একা মিসেসেই করে ফেলে।
আর আমরা ছুটির দিনে প্রায়ই ঘুরতে যাই। মিসেস সারা সপ্তাহে কাজ করে রিলাক্স চায়। সেটার ও একটা খরচ আছে ভাই।
তারপর ভাই মেয়েদের ধন্যবাদ দিতেই হয়। আমার মিসেস সারাদিন কাজ করে আবার ঘরে সব দিকে নজর। কাজের মেয়েটাকে আসলেই ধন্যবাদ এত কিছু সামলাই।
আমার নিজেকে এখন অপর্দাথ মনে হচ্ছে। টাকা দিয়ে কাজ করানো কাজের মেয়েকেও ধন্যবাদ দেওয়া যায় কিন্তু সব কিছু বির্সজন দিয়ে সে এত বছর ধরে আমার সংসার বিনা বেতনেই কাজ করে যাচ্ছে তাকে কখনো কি আমি ধন্যবাদ দিয়েছি একটা ?
এখন আমি টুকটাক কাজ করে দিই পায়েলকে। নিজের কাপড় নিজে ধুয়ে ফেলি। পায়েলকে বলি
-আগে তো কত সেজে থাকতে। যত্নে করতে এখন করো না কেন?
-আগে তো দেখার মানুষ ছিলো এখন আছে নাকি?
-আমাকে বলো কি কি লাগবে এনে দিবো।
পায়েল ভুরু কুচকে তাকায়। আবার মিষ্টি হাসি দেয়।
খাওয়া দাওয়ার আগে টেবিলটা ঠিক করে রাখি পানি নিয়ে রাখি। মাঝেমধ্যে আসবাবপত্র গুলো আমিই মুছে রাখি। খাওয়া শেষে পায়েল যখন থালাবাসন পরিস্কার করে আমি তখন টেবিলটা গুছিয়ে ফেলি।
পায়েলকে বলেছি তোমাকে আর আয়রন করতে হবে না। ছুটির দিনে আমি দোকানে দিয়ে আসবো।
-টাকা?
- সপ্তাহে পাঁচটা পোশাক আয়রন করতে যত টাকা লাগবে তত টাকার তো আমি একবারের টিফিন খাই।
খেয়াল করলাম আমার ছোট্ট ছোট্ট সাহায্যে পায়েলের কাজের পরিমান অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। নিজের যত্ন করে৷ এখন অত রাগারাগিও করে না। আমি ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে বলি। এইটা করতে আমার সময় ব্যয় হয় না। কিন্তু পায়েলকে দেখি আয়নায় সামনে গিয়ে একটু হাসে। তখন আমার বুকের থম ধরা ভাবটা একটু কাটে।
কেন ক্যামরা লাগিয়েছিলাম নিজেই ভুলে গেছি। এত কিছুর মধ্যে আমি পায়েলকে কত সময় দিয়েছি। যা সন্দেহ করেছি তা যদি ঠিকও হতো দোষটা কি আমার হতো না?
আরেক ছুটির দিনে সব ক্যামরা খুলে ফেলি। পায়েলকে সব বলি। পায়েল বলে - কি পেলে তো?
- তোমাকে খুজে পেলাম আবার, আমার ঘরের বউ আর বাচ্চার মা নয়। পায়েল হিসেবে তোমায় পেলাম।
ধন্যবাদ তোমাকে পায়েল।
-কেন?
- এই যে এত কিছু করো আমাদের সংসারের জন্য।
- ধন্যবাদ তোমাকে আকাশ। আমার মতো হাজারো পায়েল তো প্রতিটি ঘরেই আছে। যারা সবটা দিয়েই সামান্য ধন্যবাদ আশা রাখেনা। কিন্তু তোমার মতো দেরীতে হলেও কয় জনে সেটা বুঝতে পারে বলো তো?
- তাই? তা তোমাকে ধন্যবাদ হিসেবে ঢাকাই জামদানী দিবো ভাবছিলাম। তাহলে লাগবে না মনে হয়। হি হি হি।
- ওমা। কেন লাগবে না? আর আমি তোমাকে ধন্যবাদ হিসেবে তিতা করলার রস খাওয়াবো কাল থেকে।
তোমার পেট বেড়ে যাচ্ছে।
-এমা, না না।
পায়েল তখন উচ্চস্বরে হেসে উঠল। ঠিক আগের প্রেমিকার মতো। ও তো প্রেমিকায় রয়ে গেছে শুধু আমি প্রেমিক হতে ভুলে গেছি।
পায়েল হাসছে, তার সাথে হাসছে ঘরের দেওয়াল টা, ছবির ফ্রেমটা দেখি দুলে দুলে হাসছে, বারান্দার সিল্কের পর্দাটা খুব জোরে বাতাসে দুলছে। বারান্দার জবা ফুলের গাছটা হাওয়ার ঝোকে হাসছে পায়েলের হাসির সাথে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন